কম্পোস্ট সার কিভাবে তৈরি করব

রাসায়নিক সারের ক্ষতিকারক প্রভাব এখন সবারই জানা। তাই, পরিবেশবান্ধব কৃষির জন্য কম্পোস্ট সার হয়ে উঠেছে জনপ্রিয় একটি পছন্দ। কিন্তু অনেকেই ভাবেন কম্পোস্ট সার তৈরি করা হয়তো অনেক ঝামেলাপূর্ণ! আজকেই সেই ভ্রান্তি দূর করে দিই!

আপনার রান্নাঘরের বর্জ্য ও বাগানের অবশিষ্টাংশই হতে পারে উঁচুমানের কম্পোস্ট সারের মূল উপাদান। আর প্রয়োজন শুধু একটু জায়গা, সঠিক পদ্ধতি এবং কিছু মিনিট সময়। তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক কীভাবে সহজেই তৈরি করবেন কম্পোস্ট সার:

কম্পোস্ট সার কি?

কম্পোস্ট সার মূলত একটি জৈব সার, যা তৈরি হয় রান্নাঘরের বর্জ্য, বাগানের অবশিষ্টাংশ ও অন্যান্য জৈব পদার্থ পচনের ফলে। এটি রাসায়নিক সারের ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে মুক্ত, পরিবেশবান্ধব এবং মাটির স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কিন্তু, কীভাবে কাজ করে এই কম্পোস্ট সার?

কম্পোস্ট সার কি

কম্পোস্ট তৈরির প্রয়োজনীয় উপাদান

জেনে নিন কীভাবে আপনার রান্নাঘরের দৈনন্দিন জিনিস দিয়েই দারুণ কম্পোস্ট তৈরি করবেন:

  • ফলের ও সবজির খোসা
  • চা ও কফির গুঁড়ো
  • ডিমের খোসা
  • কাগজের টুকরো
  • গোবর
  • কাঠের গুঁড়ো বা খড়কুটা
  • মাটি

কম্পোস্ট তৈরির নিয়ম

আপনার বাড়ির উঠোনে কি পড়ে আছে পচনশীল উচ্ছিষ্ট, শাকপাতা আর ছেঁড়া কাগজের স্তূপ? এগুলো কি জ্বালিয়ে দূষিত করছেন পরিবেশ, নাকি নীরবে ফেলছেন ডাস্টবিনে? এই “আবর্জনা”কেই কাজে লাগিয়ে তৈরি করুন জৈব সার! কীভাবে? চলুন জেনে নেওয়া যাক স্তূপ পদ্ধতিতে কম্পোস্ট তৈরির সহজ কৌশল:

১. প্রথমেই বাড়ির উঁচু, ছায়াযুক্ত কোনো জায়গা বাছুন। মনে রাখবেন, সেখানে জলাবদ্ধতা হওয়া যাবেনা। আশেপাশে যদি গাছ থাকে, তাহলে তো আরো ভালো!

২. প্রথমে শুকনো পাতা, খড়কুটো দিয়ে প্রায় ১৫ সেমি. পুরু একটা লেয়ার তৈরি করুন। এতে সবুজ আবর্জনা ব্যবহার করবেন না, কারণ এতে পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়।

কম্পোস্ট তৈরির নিয়ম

৩. এই লেয়ারের উপর ২০০ গ্রাম ইউরিয়া ও টিএসপি সার ছিটিয়ে দিন। এতে পচনক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে।

৪. সার দেওয়ার পর ২.৫-৫ সেমি. পুরু করে গোবর ও কাদা মাটির মিশ্রণ দিয়ে লেয়ারটিকে ঢেকে দিন। এতে জীবাণুর কার্যক্রম বাড়বে এবং পচন দ্রুত হবে।

৫. এভাবেই শুকনো আবর্জনা, সার ও গোবরের লেয়ার তৈরি করে ১.২৫ মিটার উঁচু পর্যন্ত স্তূপ করে ফেলুন।

৬. স্তূপের উপর মাটি দিয়ে ঢেকে দিন। খেয়াল রাখবেন মাঝে মাঝে স্তূপের ভেতরের আর্দ্রতা ঠিক আছে কিনা। খুব শুকনো হলে সামান্য জল দিতে পারেন।

৭. প্রায় ৩-৪ মাস অপেক্ষা করুন। মাঝে মাঝে কাঠির সাহায্যে স্তূপটি দিতে পারেন।

৮. অবশেষে আপনার সামনেই থাকবে কালো, ঝুরঝুরে, গন্ধহীন জাদুর সার! এটি ব্যবহার করুন বাগানে, ফুলের ক্ষেতে, এমনকি ছাদবাগানেও। দেখবেন, গাছপালা কীভাবে সতেজ ও সুস্থ হয়ে উঠছে!

কম্পোস্ট ব্যবহারের উপকারীতা

কম্পোস্ট ব্যবহারের উপকারীতা কী কী, তা কি জানেন? চলুন, একঝলকে দেখে নেওয়া যাক:

1. মাটির স্বাস্থ্যের উন্নতি: কম্পোস্ট মাটির জীবজগতকে সমৃদ্ধ করে, যা মাটির স্বাস্থ্য ও উর্বরতা বাড়ায়। ফলে গাছপালা আরো বেশি পুষ্টি শুষে নিতে পারে এবং সতেজ, সুস্থ ও ফলনশীল হয়ে ওঠে।

2. জল ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি: কম্পোস্ট মাটির মতোই কাজ করে, স্পঞ্জের মতো জল ধরে রাখে। ফলে কম পানিতেও গাছপালা টিকে থাকে, সেচের খরচ ও পরিবেশ দূষণ কমে।

কম্পোস্ট ব্যবহারের উপকারিতা

3. মাটির এ্যাসিডিটি নিয়ন্ত্রণ: কিছু মাটি অতিরিক্ত এসিডিক হয়ে গেলে গাছপালা বাঁচতে পারে না। কম্পোস্ট মাটির এ্যাসিডিটির ভারসাম্য রক্ষা করে, সব ধরনের গাছের জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরি করে।

4. রোগবালাই প্রতিরোধ: কম্পোস্ট মাটিতে উপকারী জীবজগত বাড়িয়ে ক্ষতিকারক ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া দূর করে। ফলে গাছপালা রোগাক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে।

5. ফলন বৃদ্ধি ও মান উন্নত: সুস্থ মাটি ও গাছপালা বেশি ফল ও ফুল ফোটায়। কম্পোস্ট ব্যবহার করে ফলনের পরিমাণ ও গুণমান দুটোই বাড়ানো যায়।

6. পরিবেশবান্ধব সমাধান: রান্নাঘরের অবশিষ্টাংশ ফেলে দেওয়ার পরিবর্তে কম্পোস্ট তৈরি করে পরিবেশ দূষণ কমানো যায়। এছাড়া কম্পোস্ট ব্যবহারে কৃত্রিম সারের প্রয়োজন কমে, যা পরিবেশের আরো উপকার করে।

কম্পোস্ট সার ব্যবহারের নিয়ম

কীভাবে এটি ব্যবহার করবেন? চিন্তার দরকার নেই, কারণ আপনি পাবেন কম্পোস্ট সার ব্যবহারের সহজ নিয়ম:

1. প্রথমেই ঠিক করুন কী গাছপালায় কম্পোস্ট ব্যবহার করবেন। ফুল, ফল, শাকসবজি – সবার জন্যই কম্পোস্ট উপকারী।

2. গাছের আকারের উপর নির্ভর করে কম্পোস্টের পরিমাণ ঠিক করুন। ছোট গাছের জন্য মুঠো পরিমাণ, আর বড় গাছের জন্য একটি পাত্র ব্যবহার করতে পারেন।

3. কম্পোস্ট সরাসরি গাছের গোড়ায় দেওয়া ঠিক নয়। প্রায় 10-15 সেমি. দূরে মাটি খুঁড়ে সেখানে কম্পোস্ট মিশিয়ে দিন।

কম্পোস্ট সার কিভাবে তৈরি করব

4. কম্পোস্টকে উপরের মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিন। এতে সার ধীরে ধীরে মাটিতে মিশে গিয়ে গাছের পুষ্টি জোগাবে।

5. প্রতি মাসে একবার করে গাছের চারপাশে কম্পোস্ট ব্যবহার করুন। ফুলের ক্ষেত্রে প্রতি দুই সপ্তাহে একবার করতে পারেন।

6. কম্পোস্ট ব্যবহারের পর গাছপালাকে ভালোভাবে জল দিন। এতে সার মাটিতে ঢুকে গিয়ে কাজ করতে পারবে।

7. অতিরিক্ত কম্পোস্ট ব্যবহার করবেন না। এতে মাটির লবণাক্ততা বেড়ে যেতে পারে, যা গাছের জন্য ক্ষতিকর।

8. কম্পোস্ট ব্যবহারের পর মাটির উপরে মালচিং করতে পারেন। এতে আর্দ্রতা ধরে থাকবে এবং সার মাটিতে মিশে যেতে সাহায্য করবে।

কিছু কমন প্রশ্ন এবং তার উত্তর

প্রশ্ন: বাড়িতে কম্পোস্ট সার তৈরি করা কি সম্ভব?

উত্তর: হ্যাঁ, বাড়িতে খুব সহজেই কম্পোস্ট সার তৈরি করা সম্ভব।

প্রশ্ন: বাড়িতে কম্পোস্ট সার তৈরি করার কতগুলি উপায় আছে?

উত্তর: বাড়িতে কম্পোস্ট সার তৈরি করার বেশ কয়েকটি উপায় আছে।

কম্পোস্টিং বিন: এটি কম্পোস্ট সার তৈরি করার সবচেয়ে সহজ উপায়। কম্পোস্টিং টাইল ,কম্পোস্টিং টিপ , কম্পোস্টিং পাইল

প্রশ্ন: কম্পোস্ট সার তৈরি করতে কোন কোন জিনিস ব্যবহার করা যায়?

  • উত্তর: রান্নাঘরের বর্জ্য: শাকসবজির খোসা, ফলের খোসা, ডিমের খোসা, চা পাতা, কফি গুঁড়ো ইত্যাদি।
  • বাগানের বর্জ্য: আগাছা, পাতা, ঘাস, কাঠের ছিপ ইত্যাদি।
  • অন্যান্য জৈব পদার্থ: কাগজ, কার্ডবোর্ড, কাঠের ছাই ইত্যাদি।

প্রশ্ন: কম্পোস্ট সার তৈরি করতে কোন কোন জিনিস ব্যবহার করা যাবে না?

  • উত্তর: মাংস, হাড়, মাছ: এগুলি পচতে দীর্ঘ সময় নেয় এবং দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে।
  • ডেইরি পণ্য: দুধ, দই, পনির ইত্যাদি পচলে দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে এবং পোকামাকড় আকর্ষণ করে।
  • তেলযুক্ত খাবার: তেলযুক্ত খাবার পচতে দীর্ঘ সময় নেয় এবং মাটিতে তেলের আস্তরণ তৈরি করে যা মাটির উর্বরতা নষ্ট করে।
  • রাসায়নিক দ্রব্য: রাসায়নিক দ্রব্য মাটি ও জল দূষণ করে।

প্রশ্ন: কম্পোস্ট সার তৈরি করার সময় কি কি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে?

উত্তর: বিভিন্ন ধরণের জৈব পদার্থ ব্যবহার করুন। স্তূপে নিয়মিত পানি এবং বাতাস সরবরাহ করুন। স্তূপকে ঢেকে রাখুন। স্তূপের তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করুন।

প্রশ্ন: কম্পোস্ট সার তৈরি হতে কত সময় লাগে?

উত্তর: কম্পোস্ট সার তৈরি হতে ৩ থেকে ৬ মাস সময় লাগে।

প্রশ্ন: কম্পোস্ট সার ব্যবহারের সুবিধা কি?

  • উত্তর: মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে


LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here